আল কোরআনের ১১৪ সূরার ১০০০ আয়াত, তাফসিরে ইবনে কাছির, সিহাহ সিত্তাহ ও বিবিধ হাদিসে হানাফী মাযহাবের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ (পর্ব-২৬৭)

 আল কোরআনের ১১৪ সূরার ১০০০ আয়াত, তাফসিরে ইবনে কাছির, সিহাহ সিত্তাহ ও বিবিধ হাদিসে হানাফী মাযহাবের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ (পর্ব-২৬৭)


সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ১৫ নং আয়াতের অনুবাদ-

১৫। হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছেন, তিনি প্রকাশ করে দিবেন কিতাবের বেশির ভাগ অংশ যা তোমরা গোপন করেছিলে। আর অনেক কিছু তিনি এড়িয়ে যাবেন। তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট থেকে নূর এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব।


সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ১৫ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির

১৫। আল্লাহ তা’আলা তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন রাসূল মুহাম্মদকে (সা.) হেদায়াত ও দ্বীনে হক সহ সব মাখলুকের কাছে প্রেরণ করেছেন। ইহুদী ও খ্রিস্টান তাদের ধারণার প্রতিকুল কিতাবের যে সব কথা গোপন করে ছিল রাসূল (সা.) সেসব কথা প্রকাশ করে দিবেন। তবে যে সব বিষয় আর প্রকাশ করার দরকার নেই, সেসব বিষয়ে রাসূল (সা.) নিরব থাকবেন।


* আহলে কিতাব আল্লাহর কিতাব মূখস্ত না করায় তাদের দুষ্ট লোকেরা তাদের অপছন্দের অনেক বিষয় বেমালুম গোপন করে ফেলে। পারলে একালের লোকেরাও কোরআনের অনেক বিষয় গোপন করে ফেলতো। কিন্তু তারা তা পারেনি কারণ এখন কোরআন অসংখ্য লোকের মুখস্ত। শিয়ারা হযরত আলীর (রা.) সংক্রান্ত কিছু কথা কোরআনে যোগ করতে গিয়ে সফল হতে পারেনি। সেজন্য তারা হযরত ওসমানের (রা.) উপর অপবাদ দিয়েছে যে, সেসব কথা হযরত ওসমান (রা.) কোরআন থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু শিয়াদের কথা গৃহিত হয়নি, কারণ কোরআন লোকদের মুখস্ত থাকায় এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে, শিয়াদের বানানো সেসব কথা মূলত কোরআনে ছিলই না। কিন্তু সব হাদিস লোকদের মুখস্ত না থাকায় মিথ্যাবাদীরা অনেক হাদিস বানিয়ে প্রচার করে। কিন্তু এসব মিথ্যা হাদিস থেকে বাঁচার উপায়ও কোরআন ও হাদিসে আছে। 


সহিহ বোখারী ৪৯৯ নং হাদিসের (সালাতের ওয়াক্ত সমূহ অধ্যায়) অনুবাদ-

৪৯৯। হযরত যুহুরী (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালেকের (রা.) নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি যা যা দেখেছি তার মধ্যে এ নামাযই আজ পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এখন নামাজও নষ্ট হতে চলেছে।  


* রাসূল (সা.) যা রেখে গেছেন তাঁর সাহাবা যুগ শেষ না হতেই এর প্রায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। আর এ নষ্ট হওয়ার কারণ দুষ্ট লোকদের হাদিস বানিয়ে প্রচার করা। মিথ্যা হাদিসকে সত্য মনে করে অনেকে তাদের ইবাদত এদিক ওদিক করে ফেলে। আর এসব দেখেই হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বিচলিত হয়ে পড়েন। 


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।


* সত্য হাদিসের সাথে মিথ্যা হাদিস প্রচার পাওয়ায় এবং লোকেরা সত্য মিথ্যা নিরূপনে সক্ষম না হওয়ায় তারা মতভেদে জড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় মহানবি (সা.)সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে বলেছেন। সংগত কারণে উম্মতের কাজ হলো সকল যুগে উম্মতের সর্ববৃহৎ দল তালাশ করে তাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা।


সহিহ আল বোখারী, ২৫৪৩ নং হাদিসের (ওছিয়ত অধ্যায়) অনুবাদ-

২৫৪৩। হযরত আসওয়াদ কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা আয়েশার (রা.) নিকট আলোচনা করল যে, আলী (রা.) রাসূলুল্লাহর (সা.) অছী ছিলেন। তিনি বললেন, নবি (সা.) কখন তাঁকে অছিয়ত করলেন? আমি তো তাঁকে নিজের বক্ষে অথবা ঠেস দিয়ে রেখেছিলাম। তিনি পানির তস্তরী চাইলেন এবং আমার ক্রোড়ে ঝুঁকে পড়লেন। আমি জানতে পারলাম না যে তিনি প্রাণ ত্যাগ করেছেন। তিনি কখন তাঁকে ওছিয়ত করলেন?


* হযরত আয়েশার (রা.) বিবেচনায় কিছু লোক হযরত আলীর (রা.) পক্ষে জাল হাদিস তৈরী করেছে। কিন্তু কিছু লোক হযরত আলীর (রা.) পক্ষে বানানো হাদিসকে সহিহ মনে করেছে। ফলে তখন হযরত আলীর (রা.) খেলাফত বিষয়ে উম্মত দু’দলে বিভক্ত হয়। তখন উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হযরত আলীর (রা.) খেলাফতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ খলিফা হিসাবে তখন তাঁদের পছন্দ ছিল হযরত আবু বকর (রা.)। সংগত কারণে তখন উম্মতের সর্ববৃহৎ দলের ইচ্ছা অনুযায়ী হযরত আবু বকর (রা.) খলিফা নিযুক্ত হন। হযরত আলীর (রা.) পক্ষের লোকজন তখন নিজেদেরকে শিয়ায়ে আলী পরিচয় দিয়ে উম্মতের সর্ববৃহৎ দল থেকে আলাদা হয়ে যায়।

সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৯২ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৯২। আউফ ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইয়াহুদী জাতি একাত্তরটি দলে বিভক্ত হয়েছিল। তারমধ্যে সত্তরটিদল জাহান্নামী এবং একটি দল জান্নাতি। আর খ্রিস্টান জাতি বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল তাদের মধ্যে একাত্তর দল জাহান্নামী এবং একটিমাত্র দল জান্নাতী। সেই সত্তার শপথ,যাঁর হাতে মুহাম্মদের (সা.) প্রাণ, অবশ্যই আমার উম্মত তিহাত্তরটি দলে বিভক্ত হবে। তারমধ্যে একটি দল জান্নাতী এবং বাহাত্তরটি হবে জাহান্নামী।আরয করা হলো, আল্লাহর রাসূল (সা.) কোন দলটি জান্নাতী? তিনি বললেন, একতাবদ্ধ যারা সুন্নতের উপর অটল থাকবে। 


* পরেও কতিপয় লোক কিছু হাদিসকে সহিহ বলেছে এবং কতিপয় লোক সে হাদিসকে সহিহ মানেনি। কতিপয় লোক বলেছে কোরআনের আয়াতের এ অর্থ এবং কতিপয় লোক বলেছে কোরআনের আয়াতের সে অর্থ। এসব বিবাদে মুসলিমদের ৭৩ দল তৈরী হয়। তখন তাদের সর্ববৃহৎ দল থেকে আলাদা হয়ে ৭২টি ছোট দল তৈরী হয়েছে। যার অনেকগুলো এর মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। আর সর্ববৃহৎ দল হানাফী নামে বিদ্যমান আছে তেরশ বছরের বেশী সময়। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হলো সর্ববৃহ দলে একতাবদ্ধ থাকা। তখন মহানবি (সা.) উম্মতের সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এটাই সুন্নত হিসাবে সাব্যস্ত হয়।


সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০৭ নং আয়াতের অনুবাদ-

১০৭। আর যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতি সাধন, কুফুরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য, তারা শপথ করেই বলবে তারা ভাল কিছু করার জন্যই ওটা করেছে; আর আল্লাহ সাক্ষি দিচ্ছেন নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।


* এক খ্রিস্টান নেতার সাথে জোট বেঁধে মোনাফেরা মসজিদে জিরার তৈরী করে। আল্লাহ তাদের মুখোস খুলে দেওয়ায়। মহানবি (সা.) তাদের ঘাটি হিসেবে তৈরী করা সে মসজিদটি ধ্বংস করে দেন। এভাবে বিভিন্ন ইসুতে মোনাফেকরা মহানবির (সা.) মোকাবেলায় মুসলিমদের মাঝে বিভেদ তৈরী করে আলাদা দল তৈরী করে। যা ছিল মুসলিমদের থেকে ছোট দল। আর তখন মুসলিমদের সর্ববৃহৎ দলে মহানবি সম্পৃক্ত ছিলেন। মহানবি (সা.) থেকে শুরু হয়ে উম্মতের সর্ববৃহৎ দল এখন হানাফী নামে বিদ্যমান রয়েছে।


সহিহ মুসলিম, ৪২৭ নং হাদিসের (পবিত্রতা অধ্যায়) অনুবাদ-

৪২৭। হযরত আবু মালেক আর-আশ’আরী (রা.)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ওজন দন্ডের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে এবং ‘সুবহানাল্লাহ ওযাল হামদুলিল্লাহ’ আসমান জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে দেবে। ‘সালাত বা নামাজ’ হলো একটি উজ্জল জ্যোতি। ‘সদকা’ হচ্ছে নিদর্শন। ‘সবর’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল – কোরআন’ হচ্ছে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল স্বরূপ। মূলত সকল মানুষ প্রত্যেক সকালে নিজেকে আমলের বিনিময়ে বিক্রি করে।তার আমল দ্বারা সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্ত করে অথবা তার ধ্বংস সাধন করে। 


* আল কোরআনের দলিল দিয়ে হানাফী ছাড়া অন্য কোন মানব সম্প্রদায়কে সঠিক প্রমাণ করা যায় না।


সূরাঃ ১১০ নাসর, ১ নং থেকে ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

১। যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে। 

২। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবে।

৩। তখন তুমি তোমার রবের হামদ এর তাসবিহ পাঠ করবে, আর তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি তো তওবা কবুলকারী। 


* আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মহানবি (সা.) মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখেছেন।হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে মহানবির (সা.) উম্মতগণ দেখছে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসার পর মানুষ দলে দলে হানাফী মাযহাবে প্রবেশ করছে। সংগত কারণে হানাফী মাযহাব গঠিত হওয়ার পর থেকে হানাফী মাযহাব আল্লাহর দীন সাব্যস্ত হয়। 


# কোরআন ও হাদিস হানাফী ইমাম আবু হানিফাকে (র.) সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। 


* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের (রা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। সাহাবা যুগের পর তাদের অনুসারী হতে হবে এ কথা আল্লাহ স্পষ্ট করেই বললেন। 


সহিহ মুসলিম, ৬৩৩৯ নং ও ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৩৯।হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। যদি দীন আসমানের দূরবর্তী সুরাইয়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত, তবে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা’ নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন, কোন পারসিক সন্তান তা’ অর্জন করত।


সহিহ মুসলিম, ৬৩৪০ নং হাদিসের [ সাহাবায়ে কেরামের (রা.) মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৬৩৪০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) নিকট বসা ছিলাম। তখন তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হল। যখন তিনি এ আয়াত পড়লেন, ‘ওয়া আখারিনা মিনহু লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম - আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এরা কারা?  নবি করিম (সা.) তার কোন জবাব দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু’ বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাস করল। রাবী বলেন, তখন আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.) ছিলেন। রাবী বলেন, নবি করিম (সা.) তাঁর হাত সালমানের (রা.) উপর রাখলেন, এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরাইয়া তারকার কাছে থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছত।


* হাদিসে বলা তাবেঈ হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) কারণ তিনি ছাড়া হযরত সালমানের (রা.) এলাকার অনারব লোক আর কোন মুজতাহিদ তাবেঈ নেই। সংগত কারণে তাবেঈ হিসেবে তিনি অবশ্যই সঠিক।


# কোরআন ও হাদিস হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু ইউসুফকে (র.)সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। 


* রাসূলের (সা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবেঈ। সাহাবায়ে কোরামের (রা.) সাথে যারা মিলিত হয়নি তারা তাবে তাবেঈ। সাহাবা যুগের পর তাদের অনুসারী হতে হবে এ কথা আল্লাহ স্পষ্ট করেই বললেন। 


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৩০ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

২৩০। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার থেকে একটি হাদিস শুনে অতঃপর তা’ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয় আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জল ও আনন্দময় করে দেবেন। কেননা এমন কতক ফিকাহ বাহক রয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে ফকীহ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী অধিকতর জ্ঞানী হয়ে থাকে। 


* মহানবির (সা.) পক্ষ থেকে দু’জন ফকিহ তাঁর হাদিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত।তাঁদের একজন ফিকাহ শিক্ষাদানকারী এবং অন্যজন উক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থী, যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারীর চেয়ে উক্ত বিষয়ে অধিকতর জ্ঞানী। ইতিহাসে এমন শুধু একটি জুটি আছে, তাঁরা হলেন ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাঁর শিক্ষার্থী ইমাম আবু ইউসুফ (র.) যিনি তাঁর ফিকাহ শিক্ষাদানকারী ইমাম আবু হানিফার চেয়ে উক্ত বিষয়ের অধিকতর জ্ঞানী ছিলেন। কারণ ইমাম আবু ইউসুফের (র.) খেলাফতের প্রধান বিচার পতির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার খেলাফতের প্রধান বিচারপতির যোগ্যতা থাকলেও তাঁর খেলাফতের প্রধান বিচারপতির অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞানের সাথে ইমাম আবু হানিফার (র.) জ্ঞান যোগ হয়ে ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান ইমাম আবু হানিফার (র.) সাথে যোগ না হওযায় ইমাম আবু হানিফা (র.) থেকে ইমাম আবু ইউসুফের (র.) জ্ঞান বেশী ছিল। সংগত কারণে তাবে তাবেঈ হিসেবে ইমাম আবু ইউসুফ (র.) অবশ্যই সঠিক।


# কোরআন ও হাদিস হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা আব্বাসীয় খলিফাগণকে সঠিক সাব্যস্ত করে।


সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি  বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম বানাব; সে বলেছিল আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালেমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।


* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মান্যতায় ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা হযরত ইব্রাহীমের বংশীয় মুসলিমদের বিশ্ব ইমাম হিসাবে সঠিক ছিলেন। হানাফী অমান্যতায় এ তালিকা থেকে তিনজন খলিফা বাদ পড়েছেন। তাদের অমান্যতার কারণ তারা জালিম ছিলেন। 


সহিহ আল বোখারী, ৩২৪৭ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩২৪৭।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি করিম (সা.) বলেছেন, এ দায়িত্ব (মুসলিম নেতৃত্বের) চিরকাল কুরাইশদের হাতেই থাকবে। যতদিন তাদের দু’জন লোক অবশিষ্ট থাকবে। 


* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মান্যতায় ৫৩ জন আব্বাসীয় খলিফা কুরাইশ বংশীয় মুসলিমদের বিশ্ব আমির হিসাবে সঠিক ছিলেন।


সহিহ আল বোখারী, ৩৪৪২ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৪৪২। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। যখন অভাব অনটন দেখা দিত তখন ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের উছিলায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন হে মাবুদ! আমরা আমাদের নবির (সা.) উছিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম যে, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর তখন প্রবল বর্ষণ করতে। এখন আমরা আমাদের নবির চাচা আব্বাসের (রা.) উছিলায় প্রার্থনা করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন ভারী বর্ষণ শুরু হত।


* উছিলায় হযরত আব্বাস (রা.) ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ব্যক্তি এবং তাঁর বংশের খলিফাগণ ছিলেন মহানবির (সা.) ধারাবাহিক ইসলামী নেতা। 


সহিহ তিরমিযী, ৩৭০১ নং হাদিসের [ রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা অধ্যায়] অনুবাদ-

৩৭০১। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল আব্বাসকে (রা.) বললেন, আগামী সোমবার আপনি আমার কাছে আসবেন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আসবেন। আমি আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য একটি দোয়া করব, যার দরুন আল্লাহ আপনাকেও উপকৃত করবেন এবং আপনার সন্তানদেরও। সকালে তিনি গেলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে গেলাম। তিনি আমাদের গায়ে একখানা চাদর জড়িয়ে দিলেন, এরপর বলেন, হে আল্লাহ আল আব্বাস ও তাঁর সন্তানদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়দিক থেকে এমনভাবে মাফ করে দিন, যার পর তাদের আন কোন অপরাধ বাকি না থাকে। হে আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানদের অধিকার পূরণের তৌফিক দিন।


রাযীন এ বাক্যটি অতিরিক্ত বলেছেন, খেলাফত এবং রাজত্ব তার সন্তানদের মধ্যে বহাল রাখ - মেশকাত ৫৮৯৮ নং হাদিস।


* আব্বাসীয়গণ মহানবির (সা.) দোয়ায় খলিফা হওয়ায় তারা মুসলিম বিশ্ব আমির হিসেবে সঠিক ছিলেন।  


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৪১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১৪১। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন যেমন প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন ইব্রাহীমকে (আ.)। কিযামতের দিন জান্নাতে আমার ও ইব্রাহীমের আসন সমানা-সামনি হবে। আর আব্বাস (রা.) আমাদের দুই বন্ধুর মাঝখানে একজন মুমিন হিসেবে অবস্থান করবেন।


মেশকাত ৫৮৯৭ নং হাদিসের (সাহাবীদের ফজিলত ও মর্যাদা  অধ্যায়) অনুবাদ-

৫৮৯৭। হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)ইরশাদ করেন, আব্বাস (রা.) আমার সঙ্গে জড়িত এবং আমি তার সাথে জড়িত।


* সংগত কারণে আব্বাসীয় খলিফাগণের ৫৩ জন যারা মুসলিম বিশ্বের আমির সাব্যস্ত তাদের সাথে মহানবি (সা.) জড়িত। মহানবি (সা.) যাদের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই সঠিক ছিলেন। 


# হানাফী মাযহাবে কোরআন ও হাদিস সাব্যস্ত সঠিক লোক ৫৫ জন। অহানাফী কোন দলে কোরআন ও হাদিস সাব্যস্ত কোন সঠিক লোক নেই। তথাপি হানাফীরা সঠিক না হয়ে তারা সঠিক হয় কেমন করে?


# মুসলিমদের চিরন্তন সঠিক পাঁচটি দলও হানাফী। তারা হলেন ১। ইমামগণের সর্ববৃহৎ দল  ২। আলেমগণের সর্ববৃহৎ দল  ৩। মুজাহিদগণের সর্ববৃহৎ দল  ৪। হাজীগণের সর্ববৃহৎ দল   ও ৫। উমরা আদায়কারীগণের সর্ববৃহৎ দল।


# ইমাম


সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি  বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম বানাব; সে বলেছিল আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালেমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।


সূরাঃ ২৫ ফুরকান, ৭৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

৭৪। আর যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতি পালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য ইমাম কর।


সহিহ আবুদাউদ, ৬০১ নং হাদিসের (নামায অধ্যায়) অনুবাদ-

৬০১। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ায় চড়েন। তিনি তার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ায় তাঁর শরীরের ডান দিকে আঘাত পান। এমতাবস্থায় তিনি বসে নামাজে ইমামতি করেন এবং আমরাও তাঁর পেছনে বসে নামাজ পড়ি। নামাজ শেষে মহানবি (সা.) বলেন, ইমামকে এ জন্যই নিযুক্ত করা হয়, যেন তার অনুসরন করা হয়। সুতরাং  ইমাম যখন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে তখন তোমরাও দাঁড়াবে। এরপর ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমারও রুকু করবে এবং ইমাম যখন মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে। এরপর ইমাম যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’। ইমাম যখন বসে নামাজ পড়বে তখন তোরাও বসে নামাজ পড়বে।  


সহিহ তিরমিযী, ১৯৮ নং হাদিসের (নামাজ অধ্যায়) অনুবাদ-

১৯৮। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইমাম হচ্ছে যামিন এবং মোয়াজ্জিন হলো আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে ক্ষমা কর। 


* ইমাম তালিকায় মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.) থাকায়, মুমিনগণ মুত্ত্তকীগণের ইমাম হওয়ার প্রার্থনা করায়, মহানবি (সা.) ইমামগণের অনুসারী হতে বলায় এবং তিনি তাদের সৎপথের দোয়া করায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# আলেম


সূরাঃ ১৬ নাহল, ৪৩ ও ৪৪ নং আয়তের অনুবাদ

৪৩।তোমার পূর্বে আমরা পুরুষ ভিন্ন (বার্তা বাহক) প্রেরণ করিনি। আমরা তাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেছিলাম।অতএব আহলে যিকরকে জিজ্ঞাস কর, যদি তোমরা না জান। 


* আলেমগণকে আহলে যিকির বলে। কোন কিছু না জানলে তাঁদের কাছ থেকে জানা ফরজ। 


সূরাঃ ৩৫ ফাতির, ২৮ নং আয়াতের অনুবাদ-

২৮। এভাবে রং বেরং- এর মানুষ, জন্তু ও আন’আম রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।নিশ্চয়্ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।


* আলেমরা আল্লাহকে ভয় করে বলে তাঁরা আল্লাহর বিষয়ে সত্যকথা বলে।


সহিহ আবু দাউদ, ৩৬০২ নং হাদিসের (জ্ঞান-বিজ্ঞান অধ্যায়) অনুবাদ-

৩৬০২। কাছীর ইবনে কায়েস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি দামেশকের মসজিদে আবু দারদার (রা.) কাছে বসে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলে, হে আবু দারদা (রা.) আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) শহর মদীনা থেকে আপনার কাছে একটা হাদিস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি আপনি উক্ত হাদিসটি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। এছাড়া আর কোন কারণে আমি এখানে আসিনি। তখন আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোন পথ অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথ অতিক্রম করান। আর ফেরেশতারা ত্বলেবে এলেম বা জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সব কিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানিতে বসবাসকারী মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আবেদের উপর আলেমের ফজিলত এরূপ যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের ফজিলত সকল তারকা রাজির উপর।  আর আলেমগণ হলেন নবিদের ওয়ারিছ এবং নবিগণ দীনার ও দিরহাম মীরাছ হিসেবে রেখে যান না; বরং তাঁরা রেখে যান ইলম।কাজেই যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করল সে প্রচুর সম্পদের মালিক হলো।  


* কোন কিছু না জানলে আল্লাহ আলেমগণের নিকট থেকে সেই জিনিস জেনে নেওয়া ফরজ করায়, আলেমগণ আল্লাহকে ভয় করেন বলে এবং আলেমগণ নবিগণের ওয়ারিশ হওয়ায় তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# মুজাহিদ


সূরাঃ ২২ হাজ্জ, ৭৮ নং আয়াতের অনুবাদ

৭৮।আর জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (জিহাদের জন্য) মনোনীত করেছেন।তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত বা জাতি।তিনি পূর্বে তোমাদের ‘মুসলিম’ নাম করণ করেছেন। আর এতে (এ কোরআনেও তোমাদের ‘মুসলিম’ নাম করণ করা হয়েছে) যেন রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যি হন এবং তোমরা স্বাক্ষী হও মানব জাতির জন্য। অতএব তোমরা সালাত বা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে যুক্ত থাক। তিনি তোমাদের অভিভাবক। কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি।


সহিহ আল বোখারী, ২৬৮৮ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-

২৬৮৮। হযরত আবু সাঈদ (রা.)কর্তৃক বর্ণিত।। নবি করিম (সা.) বলেছেন, এমন এক যামানা আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে থাকবে। তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে তোমাদের সঙ্গে কি নবি করিমের (সা.) কোন সাহাবা (রা.) আছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। এরপর এমন এক সময় আসবে,তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে, নবি করিমের (সা.) সাহাবায়ে কেরামের (রা.) সাহচর্য লাভ করেছেন, এমন লোক কি তোমাদের সঙ্গে আছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। সুতরাং তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। এরপর আরো একটি যুগ এমন আসবে, তখনও তাদেরকে জিজ্ঞাস করা হবে, তোমাদের সাথে এমন কোন ব্যক্তি আছেন কি? যিনি নবি করিমের (সা.) সাহাবাদের (রা.) সহচরদের (র.)সাহচর্য লাভ করেছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। সুতরাং তাদেরকেও বিজয় দান করা হবে। 


* যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং আল্লাহ যাদেরকে বিজয় দান করেন তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# হাজী ও উমরা আদায়কারী


সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ৯৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

৯৬। নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর, যা মানব জাতির জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তাতো মক্কায়। উহা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য হেদায়াত। 


সহিহ সুনানে নাসাঈ, ৩১২৫ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অুনবাদ-

৩১২৫। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর প্রতিনিধি তিন শ্রেণীর, যোদ্ধা, হাজী এবং উমরাহ আদায়কারী।


* কাবার হেদায়াত তারা পায় যারা হেদাযাতের জন্য সেখানে আসে। তাদের হাজী ও উমরাহ আদায়কারী আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের সর্ববৃহৎ দল অবশ্যই সঠিক।


# মুসলিমদের উপরোক্ত পাঁচটি দল যখন যে দলের সাথে ছিল তখন সে দল সঠিক ছিল। এখন তারা যে দলের সাথে আছে তারা এখন সঠিক আছে। ভবিষ্যতে তারা যাদের সাথে থাকবে তারা তখন সঠিক থাকবে। তেরশ বছরের বেশী সময় ধরে তারা হানাফীদের সাথে আছে বিধায় এসময় তারা সঠিক আছে। ভবিষ্যতে তারা ইমাম মাহদীর (আ.) দলের সাথে থাকবে তখন ইমাম মাহদীর (আ.) দল সঠিক থাকবে। তখন আবার যারা হানাফীতে পড়ে থাকবে তারা তখন সঠিক থাকবে না। 


মিথ্যা যোগ করা তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিল যেমন আহলে কিতাবদের বিভ্রান্তির কারণ হয়েছে। মিথ্যা যোগ করা হাদিসের কিতাব সমূহও কিছু সংখ্যক মুসলিমের বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা সঠিক পথে আছে যারা মুসলিমদের সর্ববৃহৎ দলের সাথে আছে।


সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-

১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।


সূরাঃ ৬ আনআম, আয়াত নং ১৫৩ এর অনুবাদ-

১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।


সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ১১ নং হাদিসের (অবতরনিকা অধ্যায়) অনুবাদ-

১১। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবি করিমের (সা.) কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি প্রথমে একটি সরল রেখা টানলেন এবং তার ডান দিকে দুটো সরল রেখা টানলেন এবং বাঁ দিকেও দুটো সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি রেখার মধ্যবর্তী স্থানে হাত রেখে বললেন, এটা আল্লাহর রাস্তা। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ‘আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে’।  -(সূরা আল আনআমঃ ১৫৩)


* উম্মতের সর্ববৃহৎ দল হানাফী মুমিনদের পথ হিসাবে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও ১। অমুসলিম ২। মোনাফেক ৩। খারেজী ও ৪। শিয়াদের পথে চলে লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়।


সূরাঃ ৪৮ ফাতহ, ২৮ নং আয়াতের অনুবাদ-

২৮। তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও দীনে হক (সত্যদীন) সহ প্রেরণ করেছেন অপর সমস্ত দীনের উপর ইহাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।


সূরাঃ ৫৮ মুজাদালা, ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ-

২০। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা হবে চরম লাঞ্চিতদের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ সিদ্ধান্ত করেছেন, আমি অবশ্যই বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণও। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।

  

সূরাঃ ৮ আনফাল, ৩৯ নং আয়াতের অনুবাদ-

৩৯। আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।অতঃপর যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহতো এর দর্শক।


সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-

৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে যাদের সম্পর্কে তোমরা জাননা, আল্লাহ জানেন।আল্লাহর পথে তোমরা যা ব্যয় করবে এর পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।


সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬৫ ও ৬৬ নং আয়াতের অনুবাদ-

৬৫। হে নবি! মু’মিন দিগকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যে কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দুইশতজন উপর বিজয়ী হবে।তোমাদের মধ্যে একশত জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর জয়ী হবে।কারণ তারা বোধশক্তিহীন সম্প্রদায়।

৬৬। আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন।তিনিতো অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দূর্বলতা আছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশত জন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দুইশতজন উপর বিজয়ী হবে।তোমাদের মধ্যে এক হাজার থাকলে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তারা দুই হাজারের উপর বিজয়ী হবে।আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। 


সূরাঃ ৩৪ সাবা, ২০ নং আয়াতের অনুবাদ-

২০। তাদের সম্বন্ধে ইবলিশ তার ধারনা সত্য প্রমাণ করল। ফলে তাদের মধ্যে একটি মুমিন দল ব্যতীত সকলেই তার অনুসরন করল।


* আল্লাহ বিজয়ী হতে চান, তিনি ফিতনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান। তাঁর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি মুসলিমদের প্রস্তুতি চান। যুদ্ধের জন্য তিনি মুসলিমদের জনবল বৃদ্ধি চান। কিন্তু মুমিনদের সর্ববৃহৎ দল হানাফী ছাড়া আর সব দল শয়তানের অনুসরন করে আলাদা হয়ে গেল। তাদের কোন দলের আল্লাহর শত্রুকে রুখে দেওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু হানাফীরা চিরকাল আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে অনবরত সংগ্রাম করে চলছে এবং প্রতি নিয়ত তাদের ঝুলিতে বিজয়ের পালক যোগ হচ্ছে।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যার চরিত্র যেমন,,তার জীবন সঙ্গী ও হবে তেমন"

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

বিজয়, আত্মত্যাগ আর সুবিধাবাদের গল্প ইয়াদ আল-কুনাইবি