মউত কেমন?
মউত কেমন?
=======
১। মউত সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দিয়েছেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম। যখন আদম আলাইহিস সালামের প্রথমপুত্র হাবিল বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজভ্রাতা ক্বাবিলের হাতে শহীদ হলেন- তখন হযরত আদম (আঃ) এ সংবাদ হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে জানালেন। তখন পর্য্যন্ত মউত সম্পর্কে হযরত হাওয়ার কোন ধারণা ছিলনা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- وما الموت অর্থাৎ- মউত কি ও কেমন?
হযরত আদম আলাইহিস সালাম বল্লেন-
لا یاکل ولا یشرب والا یقوم ولا یقعد
অর্থাৎ “মউত হলো- তখন খানাপিনা ও উঠাবসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন নড়াচড়াও করতে পারেনা”।
একথা শুনে হযরত হাওয়া (আঃ) চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলেন। তখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম বল্লেন-
علیک الرنۃ وعلی بناتک ، وانا وبنی منھا براء
অর্থাৎ- “তুমি এবং তোমার পরবর্তী মেয়ে সন্তানদের উপর রইলো রোনাজারি করার স্বভাব। আমি এবং আমার পরবর্তী ছেলে সন্তানরা রোনাজারি হতে মুক্ত”। (হাকীম তিরমিযি তাঁর নাওয়াদিরুল উছুল গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদার (তাবেয়ী) সূত্রে এই বর্ণনাটি দিয়েছেন)।
মানব ইতিহাসে হাবিলের শাহাদাত-ই ছিল প্রথম মউত। তাই বিবি হাওয়াকে সরলভাবে বুঝানোর জন্য হযরত আদম (আঃ) এভাবে উদাহরণ দিয়ে মউতের অবস্থা বুঝিয়েছিলেন- হাকীকত সম্পর্কে নয়।
২। আল্লাহর বন্ধুগণের জন্য মউত হলো আল্লাহর সাথে মিলনের সেতু
এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু আবদুল্লাহ কুরতুবী তাঁর তাযকিরাহ্ গ্রন্থে আরো একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন-
وروی ان ملک الموت علیہ السلام جاء الی ابراھیم علیہ السلام خلیل الرحمن عزوجل لیقبض روحہ۔ فقال ابراھیم علیہ السلام یا ملک الموت ھل رأیت خلیلا یقبض روح خلیلہ ؟ فعرج ملک الموت علیہ السلام الی ربہ فقال : قل لہ ھل رأیت خلیلا یکرہ لقاء خلیلہ؟ فرجع فقال اقبض روحی الساعۃ - وقال ابو الدرداء ص مامن مؤمن الا والموت خیر لہ ۔ فمن لم یصدقنی فان اللّٰہ تعالی یقول وما عند اللّٰہ خیر للابرار۔ وقال حبان بن الاسود الموت جسر یوصل الحبیب الی الحبیب۔ التذکرۃ صفحۃ ۰۱
অর্থ- (ইমাম কুরতুবী বলেন)- “বর্ণিত আছে- মালাকুত মউত (আযরাঈল আলাইহিস সালাম) হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের কাছে তাঁর জীবনের শেষ মহুর্তে রূহ্ কব্জ করতে আসলো। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথা শুনে বল্লেন- হে মালাকুল মউত! তুমিই বলো- কোন একান্ত বন্ধু কি আপন বন্ধুর রূহ্ কব্জ করতে পারেন? একথা শুনে আযরাঈল (আঃ) ফিরে গিয়ে আল্লাহর কাছে আরযি দিলেন। আল্লাহ্ বল্লেন- তুমি গিয়ে আমার খলীল (একান্ত প্রাণ উৎসর্গকারী) বন্ধুকে বলো- “আপনিই বলুন- কোন বন্ধু কি আপন ঘনিষ্ট বন্ধুর ডাকে সাড়া দিতে আপত্তি করতে পারে”? আযরাঈল ফিরে এসে একথা শুনালে হযরত ইবরাহীম (আঃ) ভাবোন্মত্ততায় বলে উঠলেন- “তাহলে দেরী না করে এই মুহুর্তেই আমার রূহ্ কব্জ করো” (এবং আমাকে বন্ধুর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দাও)”।
এটা ছিল প্রেমাস্পদের সাথে মিলনের উদ্দেশ্যে মউত কামনা করা। এটা অতি উত্তম। হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- “যেকোন মুমিনের কাছে মৃত্যুই তাঁর জন্য উত্তম”। (কেননা, এর দ্বারা সে মাহবুবে হাকিকীর সাথে মিলনের সুযোগ পায়)। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন- “কেউ যদি আমার কথা সত্য মনে না করে- তাহলে সে যেন আল্লাহর এই বাণী পড়ে নেয়- “আল্লাহর দরবারে যেসব নেয়ামত ও পুরস্কার রয়েছে- তা নেক্কারদের জন্য অতি উত্তম”। (সুরা আলে ইমরান ১৯৮ আয়াত)।
হাইয়ান ইবনে আসওয়াদ (রহঃ) বলেছেন- “মউত হলো সেতুবন্দ স্বরূপ- যা এক বন্ধুকে অন্য বন্ধুর কাছে পৌঁছিয়ে দেয়”। (তাযকিরাহ্ ১০ পৃঃ)
সুতরাং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রেমাকর্ষণে মৃত্যু কামনা করা অতি উত্তম। বুঝা গেলো- দুনিয়ার ঝামেলায় মৃত্যু কামনা করা জায়েয নেই। ঈমান রক্ষা করা কিংবা বন্ধুর সাথে মিলনের আকাংখায় মৃত্যু কামনা করা যেতে পারে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন